,ইফরানুল হক সেতু, বাজিতপুর প্রতিনিধিঃ
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় একাধিক রোগী, কর্মচারী এবং স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকের পরিবারের সদস্যদের যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগগুলো সামাজিক ও গণমাধ্যমে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
প্রথম অভিযোগটি আসে নিকলী উপজেলার ‘হেলথ অ্যান্ড কেয়ার’ নামক একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ফারুক মিয়া (৫৫) ও তার পরিবার থেকে। ফারুক মিয়া জানান, তার ১৭ বছর বয়সী কন্যা ফারজানা চৌধুরী দোলাকে চিকিৎসার নাম করে ডা. রুহুল আমিন কৌশলে একাকী কক্ষে নিয়ে একাধিকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন।
ঘটনাটি ঘটার সময় মেয়ের বড় ভাই পূন্য চৌধুরী (২৫) সেখানে উপস্থিত হয়ে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন। পরে, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় পূন্যকে মাদকাসক্ত হিসেবে সাজিয়ে স্থানীয় নিকলী থানায় সোপর্দ করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
পরবর্তীতে, ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল, বাজিতপুর উপজেলার সরারচর সাইক মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আরও একটি অভিযোগ সামনে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী রোগী অভিযোগ করেন, চিকিৎসার সময় ডা. রুহুল আমিন তাকে স্পর্শকাতর স্থানে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করেন। ঘটনার পরপরই এলাকাবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়ায় তিনি জনসম্মুখে ক্ষমা চান বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে।
স্থানীয় সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ডা. রুহুল আমিন এর আগেও একাধিক রোগী ও নারীকর্মীকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়রানি করেছেন। তবে লোকলজ্জা, সামাজিক অবস্থান ও আইনি প্রক্রিয়ার ভয়ের কারণে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাননি।
অভিযোগ সম্পর্কে ডা. রুহুল আমিন তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও সাজানো। স্থানীয় কিছু সাংবাদিক বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে বড় করে দেখাচ্ছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছি।”
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. অভিজিত শর্ম্মা জানান, “একজন সরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর ও দুঃখজনক। বিষয়টি একটি ফৌজদারি অপরাধের আওতাভুক্ত। আমি ব্যক্তিগত ও পেশাগতভাবে নিশ্চিত করব, ভুক্তভোগীরা যেন সুবিচার পান।”
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ওয়াদুদ চৌধুরী প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, “এটি ডা. রুহুল আমিনের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। যদি কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তা প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তদন্ত ও বিচার করা হবে।”
নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী আরিফ জানান, “আমরা লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”