কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্টে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে স্থাপনা নির্মাণ দৈনিক লাল সবুজের দেশ দৈনিক লাল সবুজের দেশ প্রকাশিত: ১১:১৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ বিশেষ প্রতিবেদকঃ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল মোটেল জোনের ১২ নং প্লটের পানির ট্যাংকের নিচে প্রায় ২ একর জমিতে পৃথক দুটি প্রকল্পে দুটি স্থায়ী বহুতল স্থাপনা নির্মান করছে একটি বেসরকারী এনজিও সংস্থা। তবে রহস্যজনক ভাবে ওইসব অবৈধ কাজের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সাইন বোর্ড়। এঘটনায় স্থানীয়সহ সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন মহল বলছেন ওইসব দখল বানিজ্য স্বৈরাচার পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয়ে, ছাত্র বিপ্লবে গন অভ্যুত্থানের পরে কিছু দিন ওই দখল বানিজ্য বন্ধ থাকলেও এখন পুনরায় আবারও পুরোদমে ওই প্রকল্পে দখল বানিজ্যের চলছে। অথচ উচ্চ আদালত থেকে ওইসব এলাকায় কোন স্থাপনা নির্মাণ না করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান, ওইসব এলাকায় স্থাপনা নির্মান করে ওয়াশ ব্লক করা হচ্ছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরেও, কিভাবে ওইসব এলাকায় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়, সে বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি প্রতিবেদককে সকালে অফিসে যোগাযোগ করার কথা বলে ফোন কেটে দেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর সুগন্ধা পয়েন্টের বেলাভূমিতে গড়ে তোলা হয় ১৫-২০টি দোকান। এ পয়েন্টের সড়ক, ফুটপাত ও বালিয়াড়িতে বসানো হয়েছে ২০০ জন ভ্রাম্যমাণ হকার। কলাতলী পয়েন্টের ‘সি ক্রাউন হোটেলের’ সামনে তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি দোকান। মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতের বেলাভূমিতে রেস্তোরাঁসহ অন্তত ৩০টি অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। প্রশাসন কয়েক দফায় এসব স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় আবার গড়ে তোলে। কক্সবাজারের সৈকত এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৯ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে। গেজেট অনুযায়ী সৈকতের বেলাভূমিতে স্থাপনা নিষিদ্ধ। আইন না মানায় ২০১৭ সালে রিট করা হয়। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সৈকতের জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ উল্লেখ করে কোনো স্থাপনা করা যাবে না নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। এর আগে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে রাতারাতি শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করায় তিন সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সরকারি ১২ জন কর্মকর্তাকে আইনি নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। বেলার আইনজীবী জাকারিয়া সুলতানা এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। ডাক বিভাগের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে এই নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এবং সৈকতের পাশের স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা থাকা অঞ্চলে গড়ে তোলা ও নির্মাণাধীন সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে সমুদ্রসৈকতের যথাযথ সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার পৌরসভার সমুদ্র তীরবর্তী উন্নয়ন নিষিদ্ধ জোনের ৩০০ মিটার এবং পৌরসভা বহির্ভূত নিয়ন্ত্রিত জোনের ৫০০ মিটার এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃক্ষরোপণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। নোটিশে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ নোটিশ পাঠানোর ৭ দিনের মধ্যে বেলার আইনজীবীকে অবহিত করতে অনুরোধ করা হয়েছিলো। অন্যথায় নোটিশ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। ইতিমধ্যে এসবও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে লোক দেখানো কার্যকর করেছেন জেলা প্রশাসন। যেসব কর্মকর্তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাঁরা হলেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বেলার আইনজীবী জাকারিয়া সুলতানা বলেন, কক্সবাজার সৈকতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করার এবং স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে নির্মিত সকল স্থাপনা ভেঙে ফেলার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়াও ২০১৩ সালে কক্সবাজারে একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকার। এ মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজার পৌরসভা এলাকার জোয়ার-ভাটার মধ্যবর্তী লাইন থেকে সৈকত সংলগ্ন প্রথম ৩০০ মিটার ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জোনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এরপরও সৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ দুঃখজনক। SHARES অপরাধ বিষয়: